অনলাইন ডেক্স // গোসত, দুধ ও ডিমে উদ্বৃত্ত বরিশালে এবারো স্থানীয় গবাদি পশুর মাধ্যমে চাহিদা মিটলেও কোরবানির সংখ্যা আগের বছরের চেয়ে কমছে বলে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের পরিসংখ্যানে বলা হয়েছে। ফলে এবার প্রায় ৩ লাখ ৯৫ হাজার পশু কোরবানির পরেও ৬১ হাজারের মত পশু উদ্বৃত্ত থাকছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারনা করছে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর।
তবে স্থানীয়ভাবে পশুর মাধ্যমে চাহিদা মিটিয়ে বিপুল সংখ্যক গরু, ছাগল খাসি, ভেড়া ও মহিষ উদ্বৃত্ত থাকলেও গবাদিপশুর দাম নিয়ে উদ্বেগ আছে ক্রেতাদের মাঝে। গত বছরও আগের বছরের তুলনায় কোরবানির পশুর দাম অন্তত ১৫-২০ ভাগ পর্যন্ত বৃদ্ধি পাবার পড়ে এবার পরিস্থিতি কোনদিকে যাবে তা বুঝতে আরো অন্তত দশদিন অপেক্ষা করতে হবে বলে মনে করছেন বাজার পর্যবেক্ষকগন। এমনকি প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের হিসেবেই বরিশাল অঞ্চলে গবাদিপশুর প্রবৃদ্ধি খুব সন্তোষজনক নয়।
অধিদপ্তরের পরিসংখ্যানে গত বছর বরিশাল অঞ্চলে ‘নিরাপদ গবাদিপশুর মাংস উৎপাদনে কোরবানিযোগ্য গবাদিপশুর প্রাপ্যতা ছিল ৪ লাখ ৪৯ হাজার ৪৫৪টি। সেখানে চলতি বছর তা মাত্র সাড়ে ৫ হাজারের মত বৃদ্ধিপেয়ে সংখ্যাটা ৪ লাখ ৫৫ হাজার ৫৩’তে উন্নীত হয়েছে। করোনা শুরুর বছর, ২০২০ সালে বরিশালে ৪ লাখ ৯৫ হাজার পশু কোরবানি হলেও ২০২১ সালে তা ৪ লাখ ৬১ হাজারে হ্রাস পায়।
তবে ২০২২ সালে পশু কোরবানির সংখ্যা প্রায় ৪ লাখ ৯৯ হাজারে উন্নীত হলেও ২০২৩সালে সম্ভাব্য পশু কোরবানির সংখ্যা প্রায় ১ লাখ হ্রাস পেয়ে ৪ লাখ ২৪৭-এর হ্রাস পায় বলে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের হিসেবে বলা হয়েছে। সে হিসেবে ২০২৩ সালে প্রায় ৫০ হাজার পশু উদ্বৃত্তের পরেও প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মতে বরিশাল অঞ্চলে গত বছর কোরবানি যোগ্য পশুর সংখ্যা ছিল ৪ লাখ ৪৯ হাজার ৪৫৪ টি।
তবে আসন্ন ঈদ উল আযহায় বরিশালে গত বছরের চেয়ে প্রায় ৩৫ হাজার কম পশু কোরবানির সম্ভাব্য প্রাক্কলন করে মোট চাহিদা নিরূপণ করা হয়েছে ৩ লাখ ৯৪ হাজার ৫২২টি। যা ২০২১ সালের পরে সর্বনিম্ন। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের এ পরিসংখ্যান অনুযায়ী এবার গত বছরের তুলনায় বরিশালে কোরবাণিযোগ্য পশুর সংখ্যা সাড়ে ৬ হাজারের মত বাড়লেও ২০২১,২২ ও ২৩ সালের তুলনায় হ্রাস পেতে পারে।
এমনকি প্রাক্কলন অনুযায়ী গত বছরের চেয়ে উদ্বৃত্তের সংখ্যা প্রায় ৩ গুন বেড়ে প্রায় ৬১ হাজারে উন্নীত হলেও বরিশালের বাজারে কোরবানির পশুর দাম আগের যেকোন বছরের তুলনায় কমার কথা বলতে পারছেন না বাজার পর্যবেক্ষকগনও। তবে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের পরিসংখ্যানের বাইরেও বরিশাল অঞ্চলে গৃহস্থ পর্যায়ে কোরবানির জন্য আরো লক্ষাধিক গরু, মহিষ, ছাগল ও ভেড়া প্রস্তুত রয়েছে বলে জানিয়েছে অধিদপ্তরের একাধিক দায়িত্বশীল মহল।
সরকারী পরিসংখ্যান অনুযায়ী বরিশাল অঞ্চলে খামার পর্যায়ে ৩ লাখ ১৬ হাজারেরও বেশী গাভী, ষাড় ও বলদ সহ ২৬ লাখ ২০ হাজার গবাদি পশু এবং ২ লাখ ৮৬ হাজার মহিষ ও পৌনে ১১ লাখ ছাগল ছাড়াও ৭৭ হাজারের মত ভেড়া রয়েছে খামার ও গৃহস্থ পর্যায়ে।
তবে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের প্রাক্কলন অনুযায়ী বরিশালে কোরবানির সংখ্যা গত বছরের হ্রাস সহ উদ্বৃত্ত পশুর সংখ্যা বাড়লেও দাম কমার সম্ভাবনা দেখছেন না বাজার পর্যবেক্ষকগন। তাদের মতে, গো-খাদ্যের মূল্য বৃদ্ধি সহ পরিবহন ব্যয় এবং শ্রমিকদের লাগামহীন মজুরী বৃদ্ধির বিরূপ প্রভাব পড়ছে কোরবানির পশুর দামের ক্ষেত্রে। বরিশালের চরাঞ্চল সহ মূল ভূখন্ড থেকে বছর জুড়েই বিপুল সংখ্যক বকনা বাছুর কুষ্টিয়া, মেহেরপুর সহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলাসমূহে যায় মোটাতাজা করণের জন্য।
সেসব গরুর একটি অংশই আবার এ অঞ্চলের কোরবানির পশুর হাটে ফিরে আসছে বিক্রির জন্য। যদিও এ অঞ্চলে যে পৌনে ৩শ কোরবানির পশুর হাট বসার কথা, তার পরিস্থিতি বুঝতে আরো কয়েকদিন অপেক্ষা করতে হবে। সবাই আশা করছেন ১ জুন থেকে গরু সহ অনন্য কোরবানির পশু হাটে আসতে শুরু করবে। জমে উঠবে হাটগুলো। তবে মূল বেচাকেনা শুরু হবে ৩ জুন থেকে।
৫ জুন রাত পর্যন্ত এ অঞ্চলের প্রায় পৌনে ৩শ পশুর হাটেই কোরবানির পশু বিক্রি জমজমাট থাকবে বলে আশা করছে প্রাণী সম্পদ অধিদপ্তরের বরিশাল বিভাগীয় দপ্তর। এদিকে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর বরিশালের উপজেলা পর্যায়ে ‘পশু বেচা কেনা সহ জবাই করার স্বাস্থ্য সম্মত উপায়’ নিয়ে সচেতনতামূলক সভা শুরু করেছে। এছাড়া এবারো পশুরহাট পর্যায়ে মেডিকেল টিম নিয়োজিত থাকছে বলে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের পরিচালক জানিয়েছেন।
তবে অধিদপ্তর থেকে জনস্বাস্থ্য ও প্রাণিস্বাস্থ্য সহ সার্বিক বিষয় বিবেচনায় নিয়ে আসন্ন ঈদ উল আজহার পশুরহাট স্থাপনে স্বাস্থ্য সম্মত ব্যবস্থাপনায় বিশেষ মনযোগী হবারও তাগিদ দেয়া হয়েছে। এবারো বরিশালে বেশকিছু আধা নিবিড় ও আধুনিক খামাড়ি কোরবানির পশু বিক্রির লক্ষ্যে প্রচারণা শুরু করেছেন আরো সপ্তাহখানেক আগেই।
তবে প্রায় সব কোরবানি দাতাই হাটে ও মাঠ থেকে কোরবানির পশু কিনতেই আগ্রহী বলে জানা গেছে। বরিশালের চরমোনাই, কসবা, বোয়ালিয়ার বাজার, সুগন্ধিয়ার বাজার, গুয়াচিত্রার বাজার এবং মহানগরীর কাউনিয়া ছাড়াও রূপাতলি সহ বেশ কয়েকটি স্থানে এবারো অস্থায়ী পশুরহাটও বসছে।
<p>প্রকাশক ও সম্পাদক : মো:রাকিবুল হাছান(ফয়সাল রাকিব)</p>
Copyright © 2025 মেহেন্দিগঞ্জ সংবাদ।। Mehendiganj Sangbad. All rights reserved.