
নিজস্ব প্রতিবেদক // বিগত ১৬ বছরে আওয়ামী লীগের শাসনামলকে ‘অনিয়মের স্বর্ণযুগ’ বলছেন অনেকেই। এরই জ্বলন্ত উদাহরণ পাওয়া গেছে বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলায়, যেখানে কোনো নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ছাড়াই ১৮ জন শিক্ষককে গায়েবি প্রক্রিয়ায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নিয়োগ দেওয়া হয়।
সূত্র জানায়, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিব পুলক রঞ্জন সাহার স্বাক্ষরিত ২০১৭ সালের ৮ আগস্টের একটি আদেশনামায় দেখা যায়, মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার ১৮ জনকে ২০১৩ সালের ১ জানুয়ারি থেকে শিক্ষক হিসেবে কার্যকর ধরা হয়েছে। অথচ, ওই সময় তারা কেউই স্কুলে যোগদান করেননি বা শিক্ষকতা করেননি। তবুও তারা চার বছরের বেতন-ভাতা সরকারি কোষাগার থেকে উত্তোলন করেন।
স্থানীয়ভাবে এ ঘটনায় ব্যাপক ক্ষোভ সৃষ্টি হলেও, তৎকালীন ক্ষমতাসীন সংসদ সদস্যের প্রভাবের কারণে কেউ প্রকাশ্যে কথা বলার সাহস পাননি। অভিযোগ রয়েছে, পুরো নিয়োগ প্রক্রিয়াটি এমপির প্রত্যক্ষ নির্দেশনা ও হস্তক্ষেপে সম্পন্ন হয়।
পরবর্তীতে মেহেন্দিগঞ্জের স্থানীয় বাসিন্দা সঞ্জয় নামের এক ব্যক্তি বরিশাল দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। দুদক অভিযোগের ভিত্তিতে ১৮ জন নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে, যা এখনো প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
ঘটনার আরও একটি চমকপ্রদ দিক হচ্ছে, নিয়োগপ্রাপ্তদের মধ্যে নাসরিন নামের এক শিক্ষিকার বয়স নিয়োগের সময় ছিল মাত্র ১৬ বছর। অপরদিকে, আখতার হোসেন নামের আরেকজন প্রার্থীর বয়স ছিল ৪৬ বছর। দুজনই উত্তর আজিমপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কর্মরত ছিলেন বলে জানা গেছে।
উল্লেখযোগ্য বিষয় হচ্ছে, এই ১৮ জন শিক্ষক-শিক্ষিকা সবাই কোনো না কোনোভাবে স্থানীয় আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী পরিবারের সদস্য, কিংবা তাদের ভাই, বোন, স্ত্রী অথবা আত্মীয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মইদুল ইসলাম বলেন,
> “এই ১৮ জন শিক্ষক নিয়োগের বিষয়ে আমাদের দপ্তরে কোনো তথ্য-উপাত্ত নেই। জনশ্রুতি রয়েছে, তারা গায়েবি পদ্ধতিতে নিয়োগপ্রাপ্ত হয়েছেন। অনেকে অল্প বয়সে কিংবা ওভারএইজ অবস্থায়ও চাকরিতে বহাল আছেন।”
বরিশাল জেলার প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আল ইমরান খন্দকার বলেন,
> “আমি এই বিষয়ে প্রথম শুনলাম। সাংবাদিকদের কাছে অনুরোধ করছি, তাদের নাম ও তথ্য দিলে আমরা খতিয়ে দেখতে পারব।”
মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রিয়াজুর রহমান বলেন,
> “এটা প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের বিষয়। এখানে উপজেলা প্রশাসনের কিছু করণীয় নেই। অনিয়ম থাকলে অধিদপ্তরই ব্যবস্থা নেবে।”
স্থানীয় সচেতন মহলের দাবি, এই ঘটনার পূর্ণ তদন্ত করে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হোক, যাতে ভবিষ্যতে কেউ গায়েবি প্রক্রিয়ায় নিয়োগ নিয়ে রাষ্ট্রের অর্থ অপব্যবহার করতে না পারে।
Leave a Reply